তাকওয়া: ইসলামী জীবনের মূল ভিত্তি। লেখক: মাওলানা মুফতি মাশরুর হুসাইন ফরাজী

- আপডেট সময় : ০৬:০৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
- / ৪৮৭ বার পড়া হয়েছে

তাকওয়া শব্দটি আরবি “ওয়াকা” (وقى) মূলধাতু থেকে উৎপন্ন, যার অর্থ বাঁচানো বা রক্ষা করা। শরয়ী পরিভাষায়, তাকওয়া হল আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যাবতীয় গুনাহ ও নাফরমানি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। সহজভাবে বললে, তাকওয়া হল আল্লাহভীতি যার ফলে একজন মানুষ সব ধরনের অন্যায় ও গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে সচেষ্ট থাকে।
বিজ্ঞাপন
কোরআনের আলোকে তাকওয়ার গুরুত্ব
আল-কোরআনে বহুবার তাকওয়ার কথা এসেছে। আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।”
(সূরা নিসা: ১)
এক অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাবান সে-ই, যে সর্বাধিক তাকওয়াবান।”
(সূরা হুজরাত: ১৩)
এ আয়াত স্পষ্টভাবে তাকওয়াকে মর্যাদার মাপকাঠি হিসেবে নির্ধারণ করেছে। জাতি, বংশ, ভাষা, রঙ—এ সবই গৌণ; মূল হলো তাকওয়া।
হাদিসের আলোকে তাকওয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকওয়ার গুরুত্ব অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে তিনি বলেন:
”اتق الله حيثما كنت، وأتبع السيئة الحسنة تمحها، وخالق الناس بخلق حسن.”
“তুমি যেখানে থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, আর কোনো খারাপ কাজ করলে ভালো কাজ করে তা মোচন করে দাও এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।”
(তিরমিজি: ১৯৮৭)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন: “মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত কে?” রাসূল (সা.) বললেন: “যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।”
(বুখারি: ৩৩৫৩)
তাকওয়া অর্জনের উপায়
১. আল-কোরআন পাঠ ও বুঝা: কোরআন হলো তাকওয়াবানদের জন্য পথনির্দেশ।
২. নিয়মিত সালাত আদায়: সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে বিরত রাখে।
৩. আল্লাহর স্মরণ: সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করলে অন্তরে তাঁর ভয় সৃষ্টি হয়।
৪. পরিশুদ্ধ মন: হিংসা, অহংকার, লোভ ইত্যাদি আত্মিক রোগ থেকে মুক্ত থাকা।
বিজ্ঞাপন
৫. সৎ ও তাকওয়াবানদের সান্নিধ্যে থাকা: ভালো বন্ধুবান্ধব তাকওয়া অর্জনে সহায়ক।
তাকওয়ার ফলাফল
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জিত হয়।
জীবন হয় প্রশান্তিময় ও সফল।
দুনিয়া ও আখিরাতে নাজাত লাভ হয়।
বিপদাপদ থেকে আল্লাহ নিরাপত্তা দেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন।”
(সূরা তালাক: ২)
উপসংহার
তাকওয়া একজন মুসলমানের জীবনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা। এটি শুধু বাহ্যিক রূপ নয়, বরং অন্তরের গভীর থেকে উৎসারিত একটি আল্লাহভীতি ও আনুগত্যের প্রকাশ। তাকওয়া অর্জনই একমাত্র পথ যা আমাদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে পারে এবং পরিপূর্ণ সফলতার পথে পৌঁছে দিতে পারে।
লেখক পরিচিতি: মাওলানা মুফতি মাসরুর হুসাইন ফরাজী সাহেব। প্রধান শিক্ষক পারনান্দুয়ালী গোরস্থান হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাগুরা সদর,মাগুরা।