দায়িত্বে দৃঢ় থাকুন, জাতি আপনার পাশে—প্রধান উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট বার্তা
সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্ব ফেলে যাওয়াকে দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মাঝপথে সরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় দফা সংলাপে এই ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেন নেতারা।
‘অর্ধেক পথে দায়িত্ব ত্যাগ নয়, বরং সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করুন’—এমন আহ্বান জানান জামায়াতপন্থী, ইসলামী এবং জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা।
‘বিপদের সময় ধৈর্য ধরুন’—ঐক্যবদ্ধ বার্তা
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি গড়তে হবে। নির্বাচনকে কলঙ্কমুক্ত করতে সংলাপের মাধ্যমে জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, “জুলাই আন্দোলনে জনগণের রক্তের বিনিময়ে যে পরিবর্তন এসেছে, তার মূল্য আমরা জানি। মাঝপথে কাজ থেমে গেলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। এজন্যই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি—মনে যেন কোনো ধরনের হতাশা না আসে।”
‘বিতর্ক নয়, সমাধানে নেতৃত্ব দিন’
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, “সংকটের সময় নেতৃত্বই জাতিকে বাঁচায়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ। হেফাজতের ওপর বিগত সরকারের শতাধিক মিথ্যা মামলা আগামী জুনের মধ্যেই প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। সেইসঙ্গে নারী সংস্কার কমিশনের ধর্মবিরোধী সুপারিশগুলো বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছে।”
‘জাতীয় স্বার্থে সবকিছু পুনর্বিবেচনার সময় এখন’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করেছি। জুলাই আন্দোলনের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে কেউ যেন একা হয়ে না পড়েন। আমরা বলেছি—চূড়ান্ত সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা জরুরি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন—জুনের পর এক ঘণ্টাও দায়িত্বে থাকবেন না।”
তিনি জানান, মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে কোনো দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত হবে না, এবং হেফাজতের মামলাগুলো সরাসরি তদারকির মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘চূড়ান্ত সময়সীমা চাই’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “আমরা চাই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ছাত্র উপদেষ্টাদের অপসারণ করা হোক। একতরফা সিদ্ধান্ত নয়, বরং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।”
নেতারা বলেন, এই সরকারই সংস্কার, বিচার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করুক—এটাই দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সেই দায়িত্ব পালনে যেন কোনোভাবে মাঝপথে হাল ছেড়ে না দেন, তা জোর দিয়েই বলেছে সবাই।